আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী বা মার্কেটার হয়ে থাকেন তাহলে ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর নাম হয়তো শুনেছেন। আর আপনি যদি প্রথম শুনে থাকেন এবং এর সম্পর্কে আপনার যদি কোন ধারনা না থাকে তাহলে আপনার মনে হতে পারে এটি অনেক কঠিন একটি মার্কেটিং ব্যবস্থা। তবে বর্তমানে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাজ করছে তারা সবাই ইনবাউন্ড মার্কেটিং এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর নামের সাথে পরিচিত। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য দর্শক বাড়াতে এবং ব্যবসা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে এটি একমাত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্ভব। আপনাকে আপনার ব্র্যান্ড, পণ্য বা পরিসেবা উন্নীত করার জন্য বিপণন প্রচারাভিযানে বিনিয়োগ করতে হবে। আপনি চিন্তা করে দেখুন যে, আজকের গ্রাহকরা সত্যিই উপলব্ধি করতে পারছেন ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর গুরুত্ব। তবে সবার মনে প্রশ্ন থাকে যে, ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর মধ্যে কোনটি অধিক জনপ্রিয়। এটা সত্যিই আলাদা দুটি মার্কেটিং পন্থা। আসুন জেনে নেই পার্থক্য গুলো-
এক নজরে বিস্তারিত
- 1 আউটবাউন্ড মার্কেটিং কি?
- 2 ইনবাউন্ড মার্কেটিং কি?
- 3 চলুন দেখে নেই ডিজিটাল মার্কেটিং এ ইনবাউন্ড মার্কেটিং এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং কিভাবে কাজ করছে
- 4 ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য-
- 5 ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর মধ্যে যোগাযোগের পার্থক্য-
- 6 ইনবাউন্ড মার্কেটিং কার্যক্রম
- 7 মার্কেটিং উন্নয়নশীল কৌশলে যে পদ্ধতিটি কার্যকর-
আউটবাউন্ড মার্কেটিং কি?
আউটবাউন্ড মার্কেটিং হল “সনাতন বিজ্ঞাপন পদ্ধতির” অপর একটি নাম। টেলিভিশন ও রেডিও বিজ্ঞাপন, মুদ্রণ বিজ্ঞাপন, টেলিমার্কেটিং, সরাসরি মেইল এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ই আউটবাউন্ড মার্কেটিং নামে পরিচিত। এটি হল একটি মৌলিক ধারণা। আউটবাউন্ড মার্কেটিং এ বিজ্ঞাপনদাতারা মিডিয়া টুলস ব্যবহার করে জনসাধারণের জন্য তাদের বার্তা এবং পণ্য সম্পর্কে জানায় কিন্তু গ্রাহক সকল তথ্য পায় না। সকলে আপনার বার্তা শুনতে পায় না। আউটবাউন্ড মার্কেটিং মানুষের কাছে পুরোপুরি আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। এই পদ্ধতি তুলনামুলকভাবে কম কার্যকর। টেলিভিশন শো এর ফাকে বিজ্ঞাপন দেওয়া, মানুষের দরজায় গিয়ে পণ্য সম্পর্কে জানানো এবং গ্রাহকদের ফোন করে পণ্য সম্পর্কে বলা এ সবই পুরাতন পদ্ধতি এবং এই বিজ্ঞাপন গুলো অনেক সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য ।
ইনবাউন্ড মার্কেটিং কি?
ইনবাউন্ড মার্কেটিং কৌশল গ্রাহকের পূর্ণ মনোযোগ পেতে ফোকাস করে। ইনবাউন্ড মার্কেটিং যে কোন ব্র্যান্ড কে গ্রাহকের সামনে অনেক সহজ ও সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম। বর্তমান গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। পূর্বের মতো এখন আর পেপার কাটিং থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে না। টেলিভিশনের পর্দায় তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। আপনি গুগলে গিয়ে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে শুধুমাত্র পণ্যটির নাম লিখলেই আপনার সামনে এসে যাবে। আপনি ঘরে বসেই মুহূর্তের মাঝেই সকল তথ্য হাতের নাগালে পাচ্ছেন। আবার প্রয়োজন হলে সংরক্ষণ করেও রাখতে পারছেন। আরও সহায়তার দরকার হলে ফেসবুক বা টুইটার একাউন্টে যেয়ে তাদের প্রস্তাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারছেন। এই নতুন মার্কেটিং কৌশল কেই ইনবাউন্ড মার্কেটিং বলা হয়। ইনবাউন্ড মার্কেটিং একটু বেশি জটিল । কিন্তু এটা আপনার টার্গেট কাস্টমারদের কাছে পৌঁছনোর কার্যকর একটি উপায়।
চলুন দেখে নেই ডিজিটাল মার্কেটিং এ ইনবাউন্ড মার্কেটিং এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং কিভাবে কাজ করছে
– মানুষ তার প্রিয় শো টি দেখতে বসে অনেক বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য দেখছে। এথেকে তারা যে ধারনা পাচ্ছে সেটি হল আউটবাউন্ড মার্কেটিং। কিন্তু অনেকসময় এটি গ্রাহকের চোখ এড়িয়ে যায়।
-ডিজিটাল সঙ্গীত এবং স্যাটেলাইট রেডিও এর সাহায্যে সহজে মানুষ রেডিও বিজ্ঞাপন গুলো শুনতে পারছে। এটিও আউটবাউন্ড মার্কেটিং। তবে বর্তমান যুগে এটা গ্রাহকের কাছে তেমন পছন্দনীয় নয়।
-সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন ও আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর একটা পদ্ধতি। তবে বর্তমান গ্রাহকরা ইন্টারনেট থেকে তাদের খবর পেয়ে যাচ্ছেন এবং একই সংবাদপত্রের ই-পেপার ও পাচ্ছেন। এটি ইনবাউন্ড মার্কেটিং পদ্ধতি। ভেবে দেখুন আপনি কোনটি ব্যবহার করেন বেশি?
-ইমেইল এর মাধ্যমে বর্তমানে অনেক গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরাসরি মেইলের মাধ্যমে ৪৪% গ্রাহক তথ্য পেয়ে থাকে। কিন্তু শতভাগ পাচ্ছে না।
-বর্তমানে তরুণরা তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পেজ খুলে থাকে, সেখানে তাদের পণ্য বিবরন দেওয়া থাকে। এটি ইনবাউন্ড মার্কেটিং। কিন্তু আউটবাউন্ড মার্কেটিং এ আমাদের বিভিন্ন পত্রিকা বা ম্যাগাজিন থেকে পন্যের বিজ্ঞাপন খুজতে হয়।
-টেলি মার্কেটিং পদ্ধতিটি ও বর্তমানে অনেক বিরক্তিকর।
-বিল বোর্ড মার্কেটিং তুলনামুলকভাবে কম সুবিধা জনক। ধরুন আপনি একটি চলন্ত গাড়িতে আছেন। বিলবোর্ড এর পুরো বিজ্ঞাপনটি সেকেন্ডের মত কম সময়ে দেখা বা কোন ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারনা নেয়া সম্ভব হয় না।
ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য-
এখন প্রযুক্তি ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মূহুর্তেই তথ্য পাঠাচ্ছে । এদের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে আউটবাউন্ড মার্কেটিং কৌশল টেলিভিশন এবং রেডিও বিজ্ঞাপন এর মত। আর ইনবাউন্ড মার্কেটিং হল সামাজিক মিডিয়া ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য প্রচার করে থাকে। এছারাও আরও কিছু পার্থক্য উল্লেখ করা হল-
১। ইনবাউন্ড মার্কেটিং তার কৌশলে pull tactics ব্যবহার করে এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং তার মার্কেটিং কৌশলে push tactics ব্যবহার করে।
২। ইনবাউন্ড মার্কেটিং তার গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ইন্টারনেটের মতো আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি, মোবাইল ফোন এবং সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অন্যদিকে আউটবাউন্ড মার্কেটিং গ্রাহকদের তথ্য দেওয়ার জন্য টেলিভিশন, রেডিও, টেলি মার্কেটিং, বিল বোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে।
ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর মধ্যে যোগাযোগের পার্থক্য-
আউটবাউন্ড মার্কেটিং এমন গনমাধ্যমের উপর নির্ভর করে যেখানে যোগাযোগের মাধ্যম একমুখী হয়। ব্যবসার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জনগণ যেভাবে চায় সেভাবে ইন্টারেক্ট করতে পারে না।
ইনবাউন্ড মার্কেটিং এ মানুষ সবকিছু নিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন এবং ব্র্যান্ডের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন। তারা ব্লগে ইমেল পাঠাতে পারেন , মন্তব্য করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পারেন এবং নানাভাবে ব্যবসায়ে নিয়োজিত থাকতে পারেন। ইন্টারনেট ভোক্তা তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। আপনার ব্যবসার সম্পর্কে কোন তথ্য প্রচারণার সময় লুকাতে পারবেন না। ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে স্বচ্ছতা, সততা ও প্রবৃত্তি। আপনাকে আপনার পণ্য ও সেবা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা গ্রাহকদের প্রদান করতে হবে এবং সৎ হতে হবে। যদি চান আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে কেউ নেতিবাচক ধারনা না নেক তাহলে অবশ্যই সবকিছু পরিষ্কার ভাবে উপস্থাপন করবেন।
ইনবাউন্ড মার্কেটিং কে আপনার কাছে জটিল মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সত্যিই বড় একটি ক্ষেত্র ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করার। উপরন্তু এক সময় গ্রাহকরাই আপনার পন্যের প্রচার বৃদ্ধি করাবে। আপনার পোস্ট গুলো লাইক অথবা শেয়ার করবে।
ইনবাউন্ড মার্কেটিং কার্যক্রম
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন
আমাদের সবার ই মোটামুটি এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারনা আছে। এটি আপনার ওয়েবসাইট কে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আকর্ষণীয় করে গ্রহন করানোর একটি কৌশল। এটি ইনবাউন্ড মার্কেটিং এ খুব জরুরি।
বিষয়বস্তু সৃষ্টি
বিষয়বস্তু অনেক ধরনের আসতে পারে। বর্তমান বিষয়বস্তু অনেকটা সহজ হয় যেন খুব সজেই সার্চ দিলে খুঁজে পাওয়া যায়। আপনার বিষয়বস্তু টি ছোট আকারের রাখার চেষ্টা করবেন। বিষয়বস্তুর সাথে ইমেজ এবং ভিডিও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।এগুলো দর্শকদের কাছ আরও পরিচিতি বাড়াবে। আপনার বিষয়বস্তু এমন ভাবে ঠিক করবেন যেন গ্রাহকরা সহজেই বুঝে।
কল টু অ্যাকশন
বিষয়বস্তু কোনোভাবেই পাঠকদের আমন্ত্রণ করা ছাড়া সম্পূর্ণ নয়। তাই কল টু অপশন টি রাখুন। আপনি আপনার গ্রাহকের জন্য একটি ডিসকাউন্ট
অফার রাখতে পারেন যার উপর ভিত্তি করে গ্রাহক আপনাকে সহজেই সাড়া দিতে পারে।
সামাজিক মিডিয়া
বর্তমানে অনেক ব্যবসায় তাদের পন্যের প্রচারের জন্য সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করছে। যেমন- ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি।
ইমেইল
ইমেইল এখনও মানুষ ব্যবহার করছে। যারা আপনার পণ্য এবং পরিষেবার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের সঙ্গে একটি চলমান সম্পর্ক বজায় রাখার এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার। আপনি আপনার পণ্য এর অফার পাঠাতে পারেন গ্রাহককে। অনেক গ্রাহক ইমেইল নিয়মিত ব্যবহার করে। বিশেষ করে পেশাজীবী মানুষ গুলো।
মার্কেটিং উন্নয়নশীল কৌশলে যে পদ্ধতিটি কার্যকর-
-আপনি আপনার ব্যবসার জন্য একটি মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করেন ব্যবসার উন্নয়নশীল ধারা বজায় রাখার জন্য। এক্ষেত্রে ইনবাউন্ড মার্কেটিং আপনার সেরা। এটা বেশি কার্যকর এবং তুলনামুলকভাবে কম খরচ হয়। আপনি খুব সহজেই আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন। আপনার গ্রাহক আপনার সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা লাভ করতে পারবে। এর জন্য আপনাকে সেখানে বড় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। এর খরচ খুবই সীমিত। অনেকেই না জানার কারনে ভেবে থাকে এটি খুবই ব্যয়বহুল মার্কেটিং পদ্ধতি।
– নিজেকে ব্যর্থ ভাববেন না। ইনবাউন্ড মার্কেটিং কৌশলের মধ্যে আপনার মার্কেট প্রচারের জন্য শুরুতে হয়তো কিছু সময় লাগতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার প্রচার যখন বাড়বে দেখবেন আপনি আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রাহক পাচ্ছেন। তাই প্রথমেই ঘাবড়ে যাবেন না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয় ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা পেয়েছেন। আপনারা জানতে পেরেছেন ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিভাবে গ্রাহক সেবা প্রদান করা হয় এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর ধারায় কিভাবে গ্রাহক সেবা প্রদান করা হয়। উভয়ই পর্যালোচনা করে কি বোঝা যাচ্ছে গ্রাহক কোন মাধ্যমটিতে বেশি সুযোগ পাচ্ছেন? পরিশেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি একজন গ্রাহক ইনবাউন্ড মার্কেটিং ধারাই বেশি সুবিধা পেয়েছে। তাই বলা যায় ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর সুবিধা আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর তুলনায় অনেক বেশি।