মাইক্রোওয়ার্কারস : এই মার্কেট প্লেসে সব ছোট ছোট কাজগুলো পাওয়া যায় । যারা একবারে নতুন তাদের জন্য এই মার্কেট প্লেসে কাজ করা অনেক সহজ। মাইক্রোওয়ার্কারস সাইটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিদিনই নতুন নতুন কাজ পাওয়া যায়। এই সাইটের কাজগুলো অত্যন্ত ছোট ছোট। এখানে একটি কাজ কেবলমাত্র একবারই করা যায়। এক একটি কাজ করতে ৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। প্রতিটি কাজের মূল্য ০.১০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯.৭৫ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ মার্কেটপ্লেসের লিংক: microworkers.com

এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।
১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো
৩য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়
৪র্থ পর্ব: চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং
৫ম পর্ব: বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের পরিচিতি
৬ষ্ঠ পর্ব: মার্কেটপ্লেসের বাইরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায়
৭ম পর্ব: পেমেন্ট উত্তোলনের উপায়
৮ম পর্ব: আপওয়ার্ক নিয়ে বিস্তারিত
৯ম পর্ব: ফাইভার নিয়ে বিস্তারিত
১০ম পর্ব: পিপল পার আওয়ার নিয়ে বিস্তারিত
১১তম পর্ব: ৯৯ডিজাইন নিয়ে বিস্তারিত
১২তম পর্ব: ইনভাটো নিয়ে বিস্তারিত
মাইক্রোওয়ার্কারস এ যে সমস্ত কাজ পাওয়া যায় :
– ফোরাম পোস্টিং
– সাইন আপ
– ফেসবুক লাইক-ভোট
– টুইটার টুইট-রিটুইট
– ক্লিক-সার্চ
– বুক মার্ক
– ইয়াহু এনসার
– ডাউনলোড- ইন্সটল
– আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি ।
কাজের ধরন :
মাইক্রোওয়ার্কারস এ দুই ভাবে কাজ করা যায় ।একটি হচ্ছে বেসিক জব – অর্থাৎ কাজ শেষে এমপ্লয়ার তার চুক্তি অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করে ।
অপরটি হল হায়ার গ্রুপ জব । হায়ার গ্রুপ জব মানে সেলার অর্থাৎ ওয়ার্কার আপনাকে জবে হায়ার করবে। কাজে কোন ধরনের বিড করতে হয় না। কাজগুলো স্বল্প সময়ে করা যায়।
মাইক্রোওয়ার্কারস এ অ্যাকাউন্ট তৈরি :

মাইক্রোওয়ার্কারস এ কাজের জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে মাইক্রোওয়ার্কারস এ একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে । অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সঠিক ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে। একটা ইমেইল এড্রেস লাগবে। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড লাগবে (অবশ্যই আপনার ইমেইল পাসওয়ার্ডের চেয়ে ভিন্ন পাসওয়ার্ড দিবেন)। তারপর কান্ট্রি অব রেসিডেন্স ঘরে কান্ট্রি সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। এখন আপনি যে মেইল ব্যাবহার করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন আপনার সেই মেইল চেক করুন। ইনবক্সে মাইক্রোওয়ার্কারস.কম এরকোন মেইল না এসে থাকলে স্প্যাম মেইল চেক করুন। প্রাপ্ত মেইলে যে অ্যাক্টিভেশন লিঙ্ক আছে সেটি ক্লিক করুন। অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করার জন্য ইমেইল ভেরিফিকেশান করা হয়। অ্যাকাউন্ট করার সময় সাইনআপ ফর্মে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হয় ।
মাইক্রোওয়ার্কারস এ কাজের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় :
অ্যাকাউন্ট লগইন করার পর মেনু থেকে জবস লিংকে ক্লিক করে সকল কাজগুলো দেখা যাবে। প্রতিটি কাজের শিরোনামের সাথে কয়েকটি তথ্য পাওয়া যায় – কাজের মূল্য , কাজটি করতে আনুমানিক কত মিনিট লাগতে পারে,শতকরা কতজনের কাজ ক্লায়েন্ট গ্রহণ করেছে , কতজন এ পর্যন্ত কাজটি করছে ইত্যাদি। কোন একটি কাজের শিরোনামের উপর ক্লিক করে সেই কাজের বিস্তারিত আরো তথ্য জানা যাবে। এর মধ্যে “হোয়াট ইজ এক্সপেক্টেড ফ্রম ওয়ার্কারস ?” অপশন থেকে কাজের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যাবে। কাজটি যে আপনি যথাযথভাবে শেষ করেছেন তা প্রমাণ দিতে কি কি তথ্য প্রদান করতে হবে তা ” রিকুয়ারিড প্রুফ দেট টাস্ক ওয়াজ ফিনিশড ?” অংশের মাধ্যমে দেয়া থাকবে ।সবশেষে ” আই একসেপ্ট দিস জব ” লিংকে ক্লিক করে একটি টেক্সটবক্সে আপনার কাজের প্রমাণগুলো দিতে হবে। কোন কাজ করতে না পারলে “নট ইন্টারেস্ট ইন দিস জব ” লিংকে ক্লিক করে বের হয়ে যাওয়াই ভাল, সেক্ষেত্রে এই কাজটি আপনার ” এবিলেবল জবস ” এর পাতায় আর কখনও দেখাবে না।
মাইক্রোওয়ার্কারস এ কাজের বর্ণনা :
ফোরাম পোস্টিং : ফোরাম হচ্ছে এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে একটা নির্দিস্ট বিষয়ের উপর রেজিস্টার ইউজাররা সবাই ওটা এবং ওটার বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। ব্যকলিংক এর জন্য ফোরাম কমেন্টিং বা প্রফাইল লিঙ্কিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফোরাম পোস্টিং কাজের জন্য যেকোন একটি ফোরামে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে এবং সিগনেচার হিসেবে ক্লায়েন্টের কোন ওয়েবসাইটের লিংক দিতে হবে। এরপর ওই ফোরামের এক বা একাধিক পাতায় স্বামঞ্জস্যপূর্ণ মন্তব্য পোস্ট করতে হবে। এই ধরনের কাজের জন্য মাইক্রোওয়ার্কারস এ সাধারণত ০.১০ ডলার থেকে ০.১৫ ডলার পেমেন্ট করা হয়।
সাইন আপ : এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অর্থাৎএমপ্লয়ার এর উল্লেখিত কোন সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় আপনার ইমেইল ঠিকানা দিতে হবে। এ ধরনের কাজ করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল ঠিকানা দেয়া ঠিক হবে না। এজন্য পৃথক একটি ইমেইল একাউন্ট খুলে সেটি দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা উচিৎ। সাইন আপ করার জন্য মাইক্রোওয়ার্কারস এ ০.১০ ডলার থেকে ০.২০ ডলার পেমেন্ট করা হয়।
ফেসবুক লাইক-ভোট : ফেসবুক লাইক-ভোট হচ্ছে এমপ্লয়ার অথবা এমপ্লয়ারের উল্লেখিত কাউকে ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা বা এমপ্লয়ারের ফ্যান হওয়া অথবা কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার ফেইসবুক ওয়াল এ পোস্ট করা। তাছাড়া এমপ্লয়ারের কোন ফেইসবুক পেইজ প্রমোট করা ।এই ধরনের কাজের জন্য মাইক্রোওয়ার্কারস এ সাধারণত ০. ১০ ডলার থেকে ০.২০ ডলার পেমেন্ট করা হয়।
টুইটার টুইট-রিটুইট : টুইটারে যদি আপনার একটি অ্যাকাউন্ট থাকে তা দিয়ে ও ইনকাম করা সম্ভব। এমপ্লয়ারের একাউন্টকে ফলো করা অথবা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে পোস্ট করতে হবে।খুবই সিম্পল কাজ।মাইক্রোওয়ার্কারস এ এই ধরনের কাজের জন্য সাধারণত ০. ১০ ডলার থেকে ০.২০ ডলার পেমেন্ট করা হয়।
ক্লিক-সার্চ : এ ক্ষেত্রে এমপ্লয়ার একটি সাইটের লিংক দিবে, যাতে ভিজিট করে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ দিয়ে সার্চ করতে হবে।সবশেষে ক্লায়েন্টের বর্ণনা অনুযায়ী এক বা একাধিক বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হবে।এটা নিজেই বুঝতে পারবেন।ক্লিক-সার্চ করার জন্য মাইক্রোওয়ার্কারস এ ০.১০ ডলার থেকে ০.১৫ ডলার পেমেন্ট করা হয়।
বুক মার্ক : ওয়েবসাইটে বেশি ভিজিটর আনার জন্য বুকমার্ক করা হয়।বুক মার্ক আসলে দুই ভাবে করা যায় । একটি হচ্ছে ব্লগের বা সাইটের প্রধান এড্রেস বুক মার্ক করানো অপরটি হচ্ছে ব্লগের বা সাইটের প্রতিটা পোস্টের লিংক-কে বুক মার্ক করানো। অনেক সাইট রয়েছে বুক মার্ক করার জন্য । এমপ্লয়ারের কোন একটি সাইটকে অন্য একটি সাইটে বুকমার্ক করার জন্য মাইক্রোওয়ার্কারস এ সাধারণত ০.১০ ডলার থেকে ০.২০ ডলার পেমেন্ট করা হয়।
ইয়াহু এনসার : ইয়াহু এর একটি সাইট হচ্ছে ইয়াহু এ্যান্সার।ইয়াহু এনসার একটু উচুমানের। এখানে বিভিন্ন প্রশ্নের এ্যান্সার করে লেভেলকে বৃদ্ধি করা যায়। সাধারনত এমপ্লয়ার এ কাজের জন্য লেভেল টু আছে এমন ব্যক্তিদের খোঁজ করে। ইয়াহু এ্যান্সার সাইটে একাউন্ট খুলে বিভিন্ন প্রশ্ন ক্ষেত্রে তথ্য প্রদান করে সমাধান দিতে হবে, এবং প্রয়োজনে আপনাকে বিভিন্ন প্রশ্ন ও করতে হতে পারে। তাছাড়া এখানে কাজ করতে হলে আপনাকে লেভেল ২ তে উন্নত হতে হবে।
ডাউনলোড- ইন্সটল : ডাউনলোড- ইন্সটল কাজে কোন সফটওয়্যার শুধুমাত্র ডাউনলোড এবং কোন কোন সময় ইন্সটলও করতে হয়। নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ডাউনলোড করে এবং ঐ সফটওয়্যারটি ইন্সটল করেও মাইক্রোওয়ার্কারস থেকে ইনকাম করা যায়। এ কাজের জন্য ০.২৫ ডলার থেকে ০.৩৫ ডলার পেমেন্ট করা হয়ে থাকে।
আর্টিকেল রাইটিং : মাইক্রোওয়ার্কারসে আর্টিকেল লিখে সবচেয়ে বেশি আয় করা যায়। যাদের লেখালেখির অভ্যাস ও ইংরেজির উপর ভাল ধারনা আছে তারা সহজেই মাইক্রোওয়ার্কারস থেকে ইনকাম করতে পারবে। লেখাগুলো ৫০ শব্দ থেকে শুরু করে ৫০০ শব্দের মধ্যে হয়ে থাকে। এ ধরনের কাজে এক দিকে যেমন ভাষাগত জ্ঞান বৃদ্ধি পায় তেমনি নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। লেখায় তথ্য সংযোগের জন্য ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে অন্যান্য ওয়েবসাইটের সহায়তা নেয়া যাবে, তবে আপনার লেখাটা অবশ্যই ইউনিক হতে হবে।

মাইক্রোওয়ার্কারস এ সফল হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস :
– এই সাইটে কোন অবস্থাতেই একাধিক একাউন্ট তৈরি করার উচিৎ নয়।একজন ওয়ার্কার একাধিক একাউন্ট তৈরি করলে তার সবগুলো একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়।
– একটি নির্দিষ্ট কাজ শুধুমাত্র একবার করতে পারবেন। তবে একই ধরনের অন্য কাজ করতে পারবেন ।
– কাজ না বুঝে কখনও কাজ জমা দিবেন না। প্রতিটি কাজের শেষে ক্লায়েন্ট আপনার কাজ পছন্দ হলে “সেটিজফাইড” দিবে, অথবা অপছন্দ হলে “নট সেটিজফাইড” রেটিং দিবে। এই দুই ধরনের রেটিং এর তুলনাকে “সাকসেস রেট” বলে ।
– ৩০ দিনে আপনি যদি ৫ টি কাজ সম্পন্ন হয় এবং “সাকসেস রেট” যদি ৭৫% এর নিচে হয়, তাহলে পরবর্তী ১ থেকে ৩০ দিন আপনি আর কোন কাজ করতে পারবেন না।
– নতুন ওয়ার্কাররা প্রথম প্রথম একদিনে সর্বোচ্চ ৫ টি কাজ করতে পারবেন।
– কখনও যদি মনে করেন আপনি যথাযথভাবে কাজ করেছেন কিন্তু ক্লায়েন্ট আপনাকে “নট সেটিজফাইড” রেটিং দিয়েছে তাহলে “সাবমিট এ কমপ্লিন” লিংকের মাধ্যমে আপনার অভিযোগ সাইটের কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন।
– তাই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কোন কাজ করা উচিৎ এবং কাজ শেষে ক্লায়েন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রমাণ উপস্থাপন করা আবশ্যক।
মাইক্রোওয়ার্কারস এ পেমেন্ট মেথড :
শুধুমাত্র “সেটিজফাইড” রেটিং পেলেই সেই কাজের টাকা আপনার একাউন্টের ব্যালেন্সের সাথে যুক্ত হবে। প্রথম উইথড্র করার আবেদনের সময় আপনার বাসার ঠিকানায় চিঠির মাধ্যমে একটি পিন নাম্বার পাঠানো হবে। এই নাম্বারটি পরবর্তীতে সাইটে প্রবেশ করাতে হবে। পিন নাম্বারের চিঠিটি আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সর্বোচ্চ ৫০দিন।একবার ঠিকানা যাচাই করার পর পরবর্তী উইথড্র আবেদনের ০ দিন থেকে ৭ দিনের মধ্যে আপনাকে মূল্য পরিশোধ করা হবে। মাইক্রোওয়ার্কারস থেকে বাংলাদেশে মানিবুকার্স এবং পেপালের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়। মানিবুকার্স দিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য ৬.৫% ফি এবং পেপাল দিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য ৭.৫ % ফি দিতে হয়।একাউন্টের ব্যালেন্স ৯ ডলারের উপর হলেই কেবলমাত্র টাকা তুলতে পারবেন। সাথে ফি দেবার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ একাউন্টে থাকতে হবে।
সাবধানতা :
০১) সঠিক ঠিকানা ব্যাবহার করতে হবে নকল ঠিকানা ব্যাবহার করা যাবে না।
০২) একই আই,পি দিয়ে একাধিক অ্যাকাউন্ট না খোলা ভাল।
০৩) মাইক্রোওয়ার্কারস আইডি পূর্ণভাবে ভেরিফাই করতে হবে।